বিদেশ যেতে কি কি মেডিকেল করতে হয়? What medical needs to be done to go abroad?
বিদেশে যেতে হলে সাধারণত বেশ কয়েকটি মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট বেশ স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরী। আপনি যদি পড়ালেখার জন্য অথবা বেশ ভ্রমনের জন্য বিদেশে যেতে চান তবে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টগুলো আপনার ভিসার সাথে যুক্ত করা হবে।
ভিসার ধরন নির্বাচনেও এই রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ন। এছাড়া আপনি যদি কর্মী হিসেবে বিদেশে যেতে যান তাহলে অনেক ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট-এ উত্তীর্ণ না হলে ভিসা পাওয়া যায় না। তাই বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল করা অত্যন্ত জরুরী।
বিদেশ যাওয়ার আগে মেডিকেল পরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট করা জরুরী। কেননা পরিপূর্ন মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট ছাড়া অনেক দেশেরই ভিসা পাওয়া যায় না। উচ্চতর পড়ালেখা বা চাকুরি যে কারনেই হোক বিদেশগামীদের মেডিকেল টেস্ট করাই লাগে।
শুধু যাওয়ার আগে না, অনেকে দেশেই কর্মী ভিসায় আগত প্রবাসীদের কাজে নিয়োগের আগে আবারো মেডিকেল টেস্ট করতে হয়। আর সে পরীক্ষায় কোন সমস্যা ধরা পড়লে চাকুরী ও ভিসা দুটোই বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই বিদেশ যাওয়ার আগেই এই টেস্টগুলো করে নেয়া জরুরী।
মেডিকেল পরীক্ষার উদ্দেশ্য
বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য, যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন ভিসা পেতে হলে মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। মেডিকেল টেস্ট এর রিপোর্ট ওকে না থাকলে অনেক দেশের ভিসাই বাতিল হয়ে যায়।
অর্থাৎ ভিসা পাওয়ায় মূলত মেডিকেল টেস্টের প্রধান উদ্দেশ্য। কেননা এই টেস্টগুলো করার পর আপনাকে একটি ফিটনেস সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে যেটা প্রমান করবে যে আপনি বিদেশে যেতে এবং যে কোন কাজ করতে শারীরিকভাবে উপযুক্ত।
কোন কোন প্রধান মেডিকেল পরীক্ষা জরুরী
চলুন এবার বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট কি কি সেগুলো সম্পর্কে জানা যাকঃ
সাধারন শারীরিক পরীক্ষাঃ উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, শরীরের বিভিন্ন অংগ ও মললূত্রের পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষা ঃ হেমোগ্লোবিন পরীক্ষা, এইচআইভি, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি/সি টেস্ট
রক্তের সাধারণ পরীক্ষা (Complete blood count)
কিছু দেশে এইচআইভি সংক্রমণ থাকা ব্যক্তিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আছে, তাই এই পরীক্ষা প্রয়োজন হয়। হেপাটাইটিস বি ও সি টেস্ট কিছু দেশে প্রয়োজন হতে পারে।
এক্স-রে পরীক্ষাঃ ফুসফুসের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যে কোন হাড় বা অঙ্গের সমস্যা চিহ্নিত করা। অনেক দেশেই যক্ষ্মা মুক্তির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে টিবি টেস্ট বাধ্যতামূলক। তাই এই টেস্ট-ও করা জরুরী।
মূত্র পরীক্ষাঃ কিডনি বা মূত্র পথের সমস্যা শনাক্তকরণ
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভাল ফলাফল পেতে প্রস্তুতি
বিদেশ মেডিকেল টেস্ট এ ভালো ফলাফল পেতে হলে আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে। যেমনঃ
●
আপনার
পরিবারের সদস্যদের পূর্ববর্তী ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ নিন। পরিবারের কোন সদস্যের যদি
স্ট্রোক, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস অথবা ক্যান্সার থেকে থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারকে
সে বিষয়ে অবহিত করুন।
●
আপনার
যদি কোন সংক্রামক রোগের টিকা না দেয়া থাকে বা বাকি থাকে তাহলে অবশ্যই দিয়ে নিতে হবে।
কারন কিছু দেশের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের প্রমাণ পত্র প্রয়োজন হতে পারে, যেমন পোলিও, মেনিনজাইটিস, পীতজ্বর
(Yellow Fever) ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমান সময়ে
অনেক দেশে কোভিড-১৯ টেস্ট এবং টিকার প্রমাণপত্র দেখানো আবশ্যক
●
ডাক্তারের
সাথে যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চান তা আগেই একটি কাগজে লিখে ফেলুন।
●
মেডিকেল
টেস্টের আগে কমপক্ষে ৬ ঘন্টার একটি গভীর ঘুম দিন।
● টেস্টের কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে থেকে মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
মেডিকেল আনটিফ কেন হয়
সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হয় যে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কোনো গুরুতর রোগে আক্রান্ত নন। বিদেশ যাওয়ার জন্য করা বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা নিরিক্ষায় যদি বিশেষ কিছু রোগ ধরা পড়ে তাহলে আপনাকে আনফিট ধরা হতে পারে। এই রোগগুলো হলঃ
● এইচআইভি পজেটিভ
● বিশেষ ও জটিল কোন চর্মরোগ
● করোনা পজেটিভ
● অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট
● জন্ডিস
● ক্যান্সার
● এছাড়া বিশেষ কিছু সংক্রামক রোগ
উপরে উল্লেখিত রোগগুলোর কোনটি যদি ইতোমধ্যে আপনার হয়ে থাকে তাহলে আগে সেগুলোর চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর মেডিকেল টেস্ট করান। তা না হলে আপনার মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট আসতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল মেডিকেল করতে কি কি লাগে? বিদেশ যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বিশেষ কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়, যেমনঃ
· আপনার বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি
· যে এজেন্সির মাধ্যমে আপনি বিদেশ যেতে চাচ্ছেন তাদের দেয়া মেডিকেল কূপন
· এন আই ডি-এর ফটোকপি
· ২ টি রঙ্গিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি
বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল করতে কত টাকা লাগে বা মেডিকেল টেস্ট খরচ কত হতে পারে তা নির্ধারন করে বলা যায় না। তবে বর্তমান সময়ে তা আনুমানিক ১০,০০০ টাকা হতে পারে।
আমাদের কাছে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট কোথায় করা হয়? বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালেই এই টেস্টগুলো করা হয়। তবে বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারী হাসপাতালে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে এই পরীক্ষাগুলো করানো যেতে পারে। এছাড়া আরোগ্য আপনাকে দিচ্ছে দারুন সাশ্রয়ী মূল্যে ফুল বডি চেকআপ প্যাকেজ। তাই আর দেরি না করে আজই আরোগ্যতে আপনার টেস্টগুলো বুকিং করে নিন।
পরিশেষে,
বিদেশ যেতে কি কি মেডিকেল করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। তবে যদি কোন কারনে আপনাকে আনফিট করা হয় তাহলে হতাস হবেন না। ৩ থেকে ৬ মাস পর পুনরায় সব টেস্টগুলো করান। আশা করা যায়, পরবর্তী চেষ্টায় মেডিকেল রিপোর্ট ফিট হবে। তবে কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা না থাকলেও যদি আনফিট রিপোর্ট দেয় তবে অবশ্যই হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।
সোহাগ ইনফোটেক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url